Saturday 22 December 2012

স্মরণ

জীবন সবসময় পরিকল্পনা মাফিক চলেনা সেটা রমি প্রতি মুহুর্তে নিজের জীবন দিয়ে বুঝতে পারছে । তারপর ও সে স্বপ্ন দেখে । অবাস্তব কল্পনা করে ।গতকাল সে নিতান্ত প্রয়োজনীয় কিছু জিনিসপত্র গুছিয়ে নিয়েছে । আর যত্ন করে গুছিয়ে নিয়েছে সমস্ত স্মৃতি । দীর্ঘ আট বছরের সংসার ছেড়ে ওকে চলে যেতে হচ্ছে । আবার যেন সেই হল লাইফ এর শুরু । শুধু দেশটা ভিন্ন । ও যার জন্য এই ভিনদেশে এসেছিল একগাদা স্বপ্ন চোখে নিয়ে সে আজ আর ওর  সাথে নেই । তাই স্বপ্নগুলো ও একাই বহন করে নিয়ে চলেছে । যদিও সেগুলো পূরণ করা আর সম্ভব নয় ।
বারান্দা থেকে windchimes গুলো সযত্নে খুলে নিল রমি । জিনিসপত্র গোছাবার এই পুরো সময়টা ওকে মানসিকভাবে  প্রচন্ড সহযোগিতা করেছে স্যালি, ওর ফ্ল্যাটমেট । নতুন যে বাসায় ও উঠবে, তাদের সাথে ও আগেই কথা বলে রেখেছিল । ওরা বলেছে বারান্দায় windchimes গুলো ঝোলাতে দেবে । সফটটয় গুলোকেও নিয়েছে সাথে । একবার ভেবেছিল বেবি pooh টা ছাড়া বাকি টয়  গুলো আরিশ কে দিয়ে দেবে । পরে মনে হলো  এগুলোর সাথে ওর জীবনের সবচেয়ে সুন্দর স্বপ্ন আর স্মৃতি জড়িত । তাই যতদিন পারবে ও এগুলো কে বয়ে নিয়ে বেড়াবে । ওরা দুজনে অনেক খেলত baby pooh কে নিয়ে । আর নিয়েছে একটা ফুলদানী, অনুপমের দেওয়া উপহার । লাল ১০ টা টিউলিপ সহ ওই ফুলদানী টা রমিকে দিয়েছিল অনুপম । অষ্টম বিবাহবার্ষিকীতে ।

রমি ঠিক করেছে এখন থেকে যতদিন বেঁচে থাকবে প্রত্যেক ১১ ই এপ্রিল এ লাল ১০ টা টিউলিপ  কিনে এনে ওই ফুলদানীতে সাজাবে । প্রত্যেক ২২ শে অক্টোবর windchimes গুলোর সামনে দাঁড়িয়ে দেখবে তার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর জন্মদিনের উপহার । প্রত্যেক ৬ জুলাই কেক কিনে আনবে, মোমবাতি জ্বালবে, রান্না করবে। যদিও কেউ অফিস থেকে ফিরে ঘরে ঢুকেই বিরানির গন্ধে খুশি হয়ে উঠবেনা । আর প্রত্যেকটা বিশেষ দিনে বা অবিশেষ দিনে  অনুপম কে উদ্দেশ্য করে লিখবে চিঠি । ওই চিঠি পড়ার কেউ থাকবেনা সে জানে । তবুও লিখবে ।

Thursday 20 December 2012

অপরাধবোধ



আমার অপরাধবোধ আমাকে একমুহুর্তের জন্য স্বস্তি দেয়না
আমি সারা রাত ঘুমাতে পারিনা
যদিবা দুচোখের পাতা এক হয় ঘুমের ঘোরে সেই স্পর্শ  আমাকে অস্থির করে তোলে
আমি বুঝতে পারিনা কি করবো
কি করে মুক্তি পাব এই কষ্ট থেকে
এই নির্বাসন থেকে মুক্তি কি মিলবেনা আমার ?
আমি অপেক্ষায় থাকবো
সেই সুদিনের ....

Saturday 15 December 2012

খসে পড়া তারা

উঠোনের আলোগুলো নিভিয়ে দিয়ে ইজি চেয়ার টা টেনে নিল রমি । মিষ্টিদির বাড়ির এই জায়গাটা বেশ সুন্দর । আজ ভাগ্যক্রমে আকাশ পরিষ্কার ।মধ্যরাত হতে আর বেশি দেরী নেই । রমি তার মোবাইল এ সময় দেখল ।

 পাশের বাড়ির বাথরুম এ জ্বলা আলোটা ওকে বিরক্ত করছিল । ও চাচ্ছিল সবাই আলো  নিভিয়ে দিয়ে ঘুমিয়ে পড়ুক । রমি আজ একদম একা বসে থাকতে চায় । হঠাৎ করেই ও আজ বিকালে মিষ্টিদির এখানে চলে এসেছে । পরে আর যাওয়া হয়নি । তাতে অবশ্য ভালই হয়েছে । বাড়ি ফিরলে আজ আর এই খসে পড়া  তারার উৎসব দেখতে পেতনা ও । ও যে ফ্ল্যাট টাতে থাকে তার বারান্দা থেকে আকাশ দেখা যায় বটে কিন্তু আশেপাশের আলোর কারণে তারা খুব একটা চোখে পড়েনা । আজ geminid meteor shower হবার কথা । এই নিয়ে বেশ একটা হইচই পড়েছে । অন্তত ফেসবুক দেখে তাই মনে হয় ।

রমি এর আগে কখনো দেখেনি খসে পড়া তারা । শুনেছে মানুষের ইচ্ছা নাকি পূরণ হয় ওই সময় কিছু চাইলে । রমি এসব প্রচলিত কথায় বিশ্বাস করেনা।  তবে তারা দেখার অভ্যাস ওর আগেও ছিল । অনেক আগে । অনুপম এর সাথে পরিচিত হবার আগে । রমির বাবা ওকে বই কিনে দিতেন প্রচুর । তার মধ্যে একটি বই ছিল গ্রহ নক্ষত্রদের নিয়ে । রাশিয়া থেকে প্রকাশিত একটি বইয়ের অনুবাদ ছিল সেটি । অনুপমের সাথে পরিচিত হবার পর ও এমনভাবে নিজের জগত ছেড়ে অনুপমের জগতে মিশে গেল, যে নিজের বলতে ওর আর কিছুই থাকলোনা ।

অনুপম নিজেও তারা দেখতে অনেক পছন্দ করে । মহাকাশ নিয়ে ওর অনেক আগ্রহ । রমি ও ওর সাথে থাকতে থাকতে ওই জগতের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেছে নিজের অজান্তে । যদিও অনুপম সেটা বুঝত কিনা ও জানেনা । আকাশের দিকে তাকিয়ে ওর অনুপম এর চলে যাবার দিনের কথা মনে পড়ল । হয়ত ঠিক এই মুহুর্তে অনুপম ও অপেক্ষা করছে খসে পড়া তারার বৃষ্টি দেখার জন্য । রমি অদ্ভূত এক একাত্মতা বোধ করলো । কিন্তু অনুপম কি ভাবছে রমির কথা ?

না ভাবাটাই স্বাভাবিক । সে তো আর ভালবাসেনা ওকে । হয়ত ভাবছে নতুন কিছু । নতুন কোনো স্বপ্নের কথা । রমি একটানা আকাশের দিকে তাকিয়ে ছিল । দেখছিল একসাথে থাকা ওই তিনটে তারাকে । ওদের দুজনের পছন্দের সেই তিনটে তারা । যারা সবসময় ওদের সাথে সাথে ঘুরত ।

হঠাৎ ছুটে গেল একটা তারা । খসে পড়া  তারা ।রমি একটা বর চেয়ে বসলো ইচ্ছাপূরণের দেবীর কাছে । পরক্ষনেই নিজের বোকামিতে  হেসে উঠলো । কারণ ও জানে কেউ পারবেনা ওর এই ইচ্ছা পূরণ করতে ।

রমি আরো অনেকক্ষণ বসে রইলো চুপচাপ । একটানা আকাশের দিকে তাকিয়ে ।

এবার একটু একটু ঠান্ডা লাগতে শুরু করেছে রমির । ও উঠে পড়ল । ঘরে যাবার আগে আরেকবার দেখে নিল আকাশটা । ইচ্ছাপূরণের দেবীরা আজ সারারাত ছোটাছুটি করবে আকাশে । কিন্তু কেউ রমির ইচ্ছা পূরণ করতে পারবেনা ।





Diary

বুকের ভিতর এমন করে পোড়ায় কেনো ? বলতে পার ? যার জন্য পোড়ে এ মন তার কি কিছু হয় ? কিছুই হয়না ....

Wednesday 12 December 2012

সিদ্ধান্ত

রমির আজকাল প্রায়ই মনে হয়, মানুষ এর যদি ঘুমের দরকার না পড়ত খুব ভালো হত ।প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে দুঃস্বপ্নের ঘোর কাটাতে ওর  সারাদিন লেগে যায়।
আজ ঘুম থেকে উঠে আয়নায় নিজেকে দেখল অনেকক্ষণ । মাঝে মাঝে ও কিছু ভাবতে পারেনা, কিছু বুঝতে পারেনা শুধু তাকিয়ে থাকে নিজের দিকে । কিছুক্ষণ পর বেডসাইড টেবিল এ রাখা দুজনের ছবিটা হাতে তুলে নিল । দেখল অনেকক্ষণ । ওদের দুজনের প্রথম ঘুরতে যাওয়া বিয়ের পরে । সেন্টমার্টিন এ । ছবিটা কে ও সরাতে পারেনি চোখের সামনে থেকে । কোনদিন পারবে বলে মনে হচ্ছেনা এই মুহুর্তে ।
আজ প্রায় সাত মাস হতে চলল অনুপম সাথে নেই । ২৫ নভেম্বর রাতে ওর  সাথে শেষ কথা হয়েছে ।  অনুপম জানিয়ে দিয়েছে ওর  চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত । অনুপম নতুন করে সব শুরু করতে চায় । নতুন সংসার করতে চায় । তাই রমিকে ডিভোর্স দেওয়ার সিদ্ধান্ত সে চূড়ান্ত করে ফেলেছে । 

গতকাল অনেক রাতে বাসায় ফিরেছে রমি । অপেরা হাউস এর পাশে অনেক রাত পর্যন্ত বসে ছিল । একা । এর আগে আরো অনেক বার এসেছে । কিন্তু একা এই প্রথম । চুপচাপ বসে একটানা জলের শব্দ শুনতে শুনতে ও নিজের ভবিষ্যত টা  কে ভাবার চেষ্টা করছিল । বিভিন্নভাবে ।  অনুপমকে ছাড়া তার জীবন টা কেমন হতে পারে । রুদ্রের একটা কবিতা মনে পড়ল ওর ..
                                              "আকাশ থেকে ছিটকে পড়া
                                               তারার মতো কখন জানি
                                               অসংলগ্ন একলা আমি ছিটকে এসে
                                               আটকে গেছি নীল শহরে...
"


ও আসলেই আটকে গেছে এই নীল শহরে । দেশে ফিরে যাবার আর কোনো রাস্তা নেই । সবাই ওকে বলেছে দেশের সামাজিক পরিস্থিতিতে একটা একলা মেয়ের জীবনযাপন অনেক কষ্টের । সেটা নাকি এই লৌহপুরির একাকিত্বের কষ্টের থেকেও অনেক অনেক বেশি । রমি মনে মনে ভাবে হবে হয়ত । এতদিন নিজেই ওর  জীবনের সব বড় বড় সিদ্ধান্ত গুলো নিয়েছে । অনুপমকে বিয়ে করা, চাকরি ছেড়ে ওর সাথে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি  দেওয়া । কিন্তু এখন ও ভয় পায় আবার নিজের সিদ্ধান্তে কিছু করতে । আট বছর পরে এসে ওর  সব সিদ্ধান্তই যে আজ ভুল প্রমাণিত হয়ে গেছে ।

আশেপাশে ওয়াইন এর গন্ধ রমিকে অনুপমের পছন্দের পারফিউম এর কথা মনে করিয়ে দিচ্ছিল  । গ্লাসের শব্দ, ওয়েটার এর ছোটাছুটি, হাসির কলরোল, লাইভ মিউজিক, সবকিছুর মধ্যেও এক কোনায় ও একা বসে রইলো চুপচাপ। একজন ওয়েটার ওর  কাছে এসেও ফিরে গেল কিছু না বলে ।

ওর মনে হলো অনুপম কি আসে এখানে ? এইভাবে কি বসে থাকে একা ? নাকি আসে বন্ধুদের সাথে, এসে  মিশে যায় এই আনন্দ আয়োজনে ।
সিডনী তে এখন গ্রীষ্মকাল । রাতে যদিও বাতাসটা ঠান্ডা হয়ে যায় । তবু রমি আজকে শাড়ি  পরেছে। জলে ভেজা ঠান্ডা বাতাসটা শরীরটাকে ছুয়ে যাচ্ছিল । ও চুপচাপ শুধু তাকিয়ে ছিল  ঢেউ এর দিকে । মাঝে মাঝে ওয়াটার ট্যাক্সি এসে জেটিতে ভিড়ছিল আর ঢেউ বাড়িয়ে দিচ্ছিল  ।

হারবার ব্রিজের দিকে তাকিয়ে মনে হলো এইত সেদিন নিউ ইয়ার এর দিনে ওরা দুপুর থেকে অপেক্ষা করছিল ফায়ারওয়ার্কস দেখার জন্য । প্রচন্ড  রোদের  কারণে ওরা ছাতি দিয়ে তাবু তৈরী করেছিল ।

রমি অবাক হয় মাঝে মাঝে । এত কিছুর পর ও  কেন অনুপম কে ভুলতে পারেনা ?  অনেকে বলেছিল এই  আবেগ নির্ভরশীলতা । কিন্তু চাকরি পেল তারপর ও কেন মনে পড়ে ? এটা কোন ধরনের নির্ভরশীলতা ? মানসিক ? অনুপম যাবার সময় বলেছিল মানসিক নির্ভরশীলতা ওর অপছন্দ নয় । ওর  অপছন্দ অর্থনৈতিক নির্ভরশীলতা ।
এই ভাবনাগুলো ওকে শান্তিতে থাকতে দেয়না । মাঝে মাঝে মনে হয় এমন কিছু কি হয়েছে যা অনুপম ওকে বলতে পারেনি । তাই সরে গেছে নিজে থেকে ।

ছবিটা কে এতক্ষণ জড়িয়ে ধরে রেখেছিল রমি । খুব যত্ন করে আবার রেখে দিল বেডসাইড টেবিল এ । ও সিদ্ধান্তে পৌঁছলো অনুপম এর জন্য ওর এই অনুভূতির এক বর্ণ ও মিথ্যে নয় । এর সঙ্গে নির্ভরশীলতার কোনো সম্পর্ক নেই । ও ঠিক করলো  দুজনের আরো কিছু ছবি বড় করে বাঁধিয়ে রাখবে ওর ঘরে ।

খলিল গিবরান এর একটি উক্তি মনে পড়ল ওর ..." “Ever has it been that love knows not its own depth until the hour of separation.”

Monday 10 December 2012

অভিমান

দুপুর থেকেই অনিন্দিতা খুব ব্যস্ত । আজ বাড়ীতে কিছু বন্ধু আসবে । ঠিক ওর বন্ধু নয় ওর স্বামী অনুপম এর ।

প্রায় ৩ মাস হলো সিঙ্গাপুর এ এসেছে অনিন্দিতা । একটা শেয়ার্ড বাসায় উঠেছে ।এ বাসায় আরো কিছু চাইনিজ থাকে ।

অনিন্দিতা বেশ দ্রুত কাজ করছিল । কারণ রান্না শেষ করে ওকে ঘর গোছাতে হবে তারপর সে গোসল করবে । এটা ওর বাঁধাধরা নিয়ম । ঘরবাড়ি পরিষ্কার রাখাটা একটা বাড়াবাড়ি রকমের পর্যায়ে পৌঁছে গেছে অনিন্দিতার ক্ষেত্রে ।অন্তত অনুপম এর সেরকমই মত । তবে বাড়িতে থাকলে অনুপম অনেক কাজেই ওকে সাহায্য করে । আর কিছু কাজ অনুপম এর জন্য তোলা থাকে ছুটির দিনে করবে বলে । কাপড় ইস্ত্রি আর বাথরুম ধোয়া এটা কখনোই করেনা অনিন্দিতা ।

বন্ধুমহলে রান্নার বেশ সুনাম রয়েছে ওর । তবে এ কৃতিত্বটা যত না অনিন্দিতার তার চেয়ে বেশি অনুপম এর প্রচার এর এমনটা ভাবে মনে মনে অনিন্দিতা । নতুন কিছু রান্না হলে সেগুলোর ছবি আপ করবে অনুপম বা বিভিন্ন জায়গায় কমেন্ট করে বউ এর রান্নার সুনাম করবে । অনিন্দিতা অবশ্য মনে মনে খুশিই হয়, কারণ এটা সত্যি রান্না সে ভালই করে ।

কোনো কিছু হলেই ও রান্না করে সেলিব্রেট করতে চায় । এই যেমন কিছুদিন আগে ওরা একটা DSLR ক্যামেরা কিনলো ।ঐদিন অনেক কিছু রান্না করলো অনিন্দিতা । আর অনুপম নতুন ক্যামেরা দিয়ে ওর ছবি তুলল বেশকিছু রান্নাঘরেই ।
অনুপম এর ছবি তোলার সখ আছে । অনুপম এর বাবার ও আছে এই শখ । অনিন্দিতা শুনেছে ছোটবেলায় অনুপমকে ওর বাবা মাঝে মাঝে একটা পুরো ফিল্ম কিনে দিত ছবি তোলবার জন্য ।

আজ খিচুড়ী রান্না করছে অনিন্দিতা । হঠাৎ ওর তেতুল খেতে ইচ্ছা হলো । ও যখন রান্নার টেনশন এ থাকে তখন  খেতে পারেনা । তাই ভাবলো একটু তেঁতুল খাবে । ফ্রিজ থেকে বের করলো তেঁতুল এর প্যাকেট । জমে একেবারে যেন পাথর হয়ে আছে । ও একটা ছুরি নিয়ে এক হাতে তেঁতুল এর চাকা টা ধরে অন্য হাতে ছুরি দিয়ে খুঁচিয়ে কিছুটা তেঁতুল কেটে বের করতে গিয়ে হাত ফসকে সোজা অন্য হাতে ঢুকে গেল ছুরি ।

প্রচন্ড ব্যাথায় ও বসে পড়েছে ততক্ষণ । রান্নাঘর থেকে দৌড়ে ঘরে চলে গেল । ঘরে যেয়ে অনুপম কে ফোন করবে বলে ফোন টা  তুলেছে কিন্তু কি ভেবে যেন আবার রেখে দিল ।

ও কথোপকথন টা কল্পনা করে নিল । শুনে প্রথমেই অনুপম বলবে এন্টিসেপটিক লাগাও । একটু অপেক্ষা কর দেখো রক্ত পড়া  বন্ধ হয় কিনা । আর তাছাড়া এত ছোট  কারণে ও কিভাবেই বা অফিস থেকে আসবে । অনুপম একটু এরকমই । ভীষণ প্রাকটিক্যাল । অন্য ছেলেদের মত ন্যাকা ন্যাকা ভাব দেখায়না বউ এর প্রতি । অনিন্দিতা জানে কিন্তু তারপর ও মনের কোনায় কোথায় যেন একটু অভিমান জমে রইলো ।

আবার নিজের হাতের দিকে তাকালো । হাতটা মুহুর্তে ফুলে গেছে আর কাটা জায়গার চারপাশ জুড়ে রক্ত জমে গেছে । তীব্র যন্ত্রনাটাও কমছেনা ।ও কি করবে বুঝতে পারছেনা । পাশের ঘরে জেস নামের একটা চাইনিজ মেয়ে থাকে ওকে ডাকলো । জেস  স্যাভলন আর তুলো দিয়ে মোটামুটি রকমের একটা ব্যান্ডেজ করে দিল । এখন হাতটা এত অবশ যে ও আর কোনো ব্যাথা অনুভব করছেনা । ও রান্নাঘরে ফিরে গেল । কাজ শেষ করতে হবে ওকে । কোনরকমে রান্না শেষ করে গোসল করে নিল ।

অবশ ভাবটা কেটে যাওয়ার পর ব্যথাটা আবার ফিরে এসেছে । ফোলাটাও যেন বেড়ে গেছে অনেকগুণ । আর কাটা জায়গা থেকে কেমন যেন সাদা মাংশ বেরিয়ে এসেছে । এবার ও ফোন করলো অনুপমকে । অনুপম শুনে বলল নিচে ডাক্তার এর কাছে যেতে । কিন্তু অনিন্দিতা ব্যাগ খুলে দেখল টাকা নেই । এরকম কখনো হয়নি । অনুপম কখনো ওকে টাকা দিয়ে যেতে ভোলেনা । অনিন্দিতা ঘুমিয়ে থাকলেও ওকে ডেকে বলে যায় যে  টাকা থাকলো । এটা অনুপম এর অভ্যাস । দোষটা অনিন্দিতার ই । ও কখনো নিজের ব্যাগ খুলে দেখেনা যে টাকা আছে কিনা । আসলে টাকা ওভাবে  ঠিক লাগেওনা । বাইরে গেলে অনুপম সবসময় সাথেই থাকে । ও আবার ফোন করলো অনুপম কে ।

কিছুক্ষণ পরে অনুপম চলে আসল অফিস থেকে । একজন জিপি কে দেখিয়ে হাত টা ব্যান্ডেজ করতে হলো । কম্পাস হাইট এর নিচে থেকে ডাক্তার দেখিয়ে ওরা যখন ফিরছিল অনুপম ওকে একহাতে জড়িয়ে ধরে রেখেছিল । অনিন্দিতার তখন নিজেকে ভীষণ  অপরাধী মনে হচ্ছিল । এই মানুষটার উপরে মিছেই অভিমান করে ও ।

Sunday 9 December 2012

খোয়াবনামা

ঘুমের ঘোরে অলকানন্দার হঠাৎ মনে হলো মুঠোর ভিতরে টি- শার্ট এর কোনাটা আর গোঁজা নেই । 

এটা অলকানন্দার অভ্যাস । বেশ কিছুদিন ধরেই চলছে । আগে ছিলনা । ঘুমানোর আগে ও  অনুপমের  টি -শার্ট  এর কোনাটা  হাতে গুজে নেয় । ওর  অদ্ভূত একটা শান্তি হয় এতে ।

বুঝলো ও পাশে নেই । উঠে পড়েছে । একটু পরে পাশের ঘর থেকে  গানের  আওয়াজ  পেল । ACCU  Radio তে কোনো একটা গান চালিয়েছে আজ । অফিস এর জন্য তৈরী হচ্ছে অনুপম ।অলকানন্দা  সকালে উঠে একটু ক্লাসিকাল বা খুব সফট মিউজিক পছন্দ করে । মাঝে মাঝে ওকে রাগ করে বলেও যে আমার সকালটা মাটি করে দিওনা তো । অনুপম বেশ শ্লাঘার স্বরে উত্তর দেয় ."তোমাকে তো আর সাত সকালে উঠে অফিস যেতে হয়না ।তুমি তো এখন ঘুমাবে বেলা এগারোটা পর্যন্ত ।তোমার ওই রাগ ভৈরবী শুনলে আমার ঘুম ভাঙ্গেনা ।"
এমনিতে অনুপম এর মিউজিক সেন্স খুবই ভালো । এ নিয়ে অলকানন্দার মনে বেশ একটা গর্ব রয়েছে ।
অনেকদিনের সংসার ওদের । তা প্রায় ৮ বছর হয়ে গেল । পিছনে ফিরে তাকালে ওর নিজের ই অবাক লাগে ।অনেকটা পথ পাড়ি দিয়ে ফেলেছে ওরা দুজনে । 
অলকানন্দা... এই নাম ধরে অনুপম ওকে ডাকেনা । ওর অন্য একটা ছোট  নাম রয়েছে ।

অনুপম ওর বাবার বন্ধুর ছেলে । ওকে যখন প্রথম দেখে তখন তেমন আকর্ষনীয় মনে হয়নি । যদিও ওকে দেখার আগেই ওর  অনেক গল্প শুনেছিল অনুপম এর বাবার কাছে । ছেলেটা খুবই লাজুক । ছেলেরা এতটা লাজুক হলে ঠিক মানায়না । আর একটু কেমন যেন দোটানায় ভোগে । সবকিছুতেই কেমন যেন দ্বিধা । ওরা দুজনে একই কলেজ এ ছিল । 

অলকানন্দা ওর সমবয়সী অন্য মেয়েদের থেকে একটু আলাদা  । অন্তত মফস্স্বল শহরের হিসাবে । রাতদিন বসে পড়া বাদ দিয়ে ক্রিকেট খেলা দেখছে । নিজের প্রিয় দল  হারলে কেঁদেকেঁটে অস্থির ।সুমনের গান শুনত আর ভাবত সুমন যদি গান না লিখত কি করে বাঁচত ও ! বাবার সঙ্গে ওর সখ্যতা অন্য ধরনের ।কবিতা খুব ভালবাসে ও ।ভালো আবৃত্তি করে । 

সেই সময় একদিন অনুপম দের বাড়িতে গিয়ে দেখে ওরা সব বসে টিভিতে কি যেন একটা অনুষ্ঠান দেখছিল । ঠিক মনে নেই আর । হঠাৎ ওর  চোখ পড়ল অনুপম এর হাতের দিকে ।ফিরিয়ে নিল দৃষ্টি । কিন্তু টি -শার্ট এর  হাতা এর  নিচে বের হয়ে থাকা, হাতের অন্যান্য অংশের থেকে একটু বেশি ফর্সা  অনুপম এর হাতের ওই অংশ ওর চোখে গেঁথে রইলো ।

পরে অলকানন্দা  বহুবার ভেবেছে শুধু হাত দেখে কেউ কারো প্রেমে পড়ে !! এ  কথাটা ও অনুপমকে বলেছেও সম্প্রতি । অনুপম ওর দিকে তাকিয়ে হেসেছিল শুধু ।

অলকানন্দা  পাশ ফিরে শুয়েছে আবার । বারান্দা থেকে ভেসে আসছে মায়াবী একটা শব্দ । windchimes !! অলকানন্দাকে এবারের জন্মদিনে কিনে দিয়েছে অনুপম । শব্দটা ক্রমাগত জোরালো হচ্ছে । অলকানন্দার  মনে  হলো  কে যেন  একজন জোর করে ওর হাতের মুঠো থেকে অনুপমের  শার্ট এর কোনাটা  ছাড়িয়ে নিচ্ছে । ও আরো শক্ত করে ধরতে চাইল কোনাটা ।খুব জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিতে থাকলো ।
হঠাৎ অলকানন্দার বুকের ভিতরে কেমন করে উঠলো । চিনচিনে একটা ব্যথা । বিছানায় উঠে বসেছে ও । Sally  তখন  টয়লেট এর  দিকে যাচ্ছিল । Sally  ওর  নতুন   রুমমেট। ও জিজ্ঞাসা করলো ... are you ok ?অলকানন্দা  একটু হাসলো শুধু ।
ওর মন বলছে মোবাইল টা তুলে নিয়ে ডায়াল করে অনুপম এর  নম্বর এ । কিন্তু ও জানে কেউ তুলবেনা ওই ফোন । আর কোনদিন না । অলকানন্দা তারিখ দেখল , আজ ঠিক সাড়ে ছয় মাস হলো অনুপম বাসা ছেড়ে চলে গেছে ।
অলকানন্দার দুঃস্বপ্নের ধরন পাল্টে গেছে চিরদিনের মত । আগে ও দেখত অঙ্ক না পারার স্বপ্ন । এখন ও শুধু দেখে কেউ একজন জোর করে ওর  হাতের মুঠো থেকে ছাড়িয়ে নিচ্ছে অনুপম এর শার্ট এর কোনা ।
বুকের চিনচিনে ব্যাথা টা কমাতে ও হাতে তুলে নিল অরুন্ধতি রায় এর " The  God of Small Things " , বইটা পড়তে পড়তে ও ঘুমিয়ে গিয়েছিল গতকাল রাত্রে ।














 

Favourite Rumi Quotes

"Out beyond ideas of wrongdoing and rightdoing,
there is a field. I'll meet you there.
When the soul lies down in that grass,
the world is too full to talk about.
Ideas, language, even the phrase "each other" doesn't make any sense."



"I am yours. Don’t give myself
back to me."


 

"Actually, your soul and mine are the same.
We appear and disappear with each other."


 

"The lover never despairs.
For a committed heart everything is possible."



"I can be without anyone
but not without You."



"Goodbyes are only for those who love with their eyes.Because for those who love with heart and soul there is no such thing as separation!"


"Your task is not to seek for love, but merely to seek and find all the barriers within yourself that you have built against it."


"However much we describe and explain love, when we fall in love we are ashamed of our words."


"If you are looking for a friend who is faultless,
you will be friendless."





"You have no idea how hard I've looked
for a gift to bring You.
Nothing seemed right.
What's the point of bringing gold to
the gold mine, or water to the ocean.
Everything I came up with was like
taking spices to the Orient.
It's no good giving my heart and my
soul because you already have these.
So I've brought you a mirror.
Look at yourself and remember me."
"One day your heart will take you to your Lover.
One day your soul will carry you to the Beloved.
Don't get lost in your pain, know that one day your
pain will become your cure."

"Patience is not sitting and waiting, it is foreseeing. It is looking at the thorn and seeing the rose, looking at the night and seeing the day. Lovers are patient and know that the moon needs time to become full."


"Your body is away from me
But there is a window open
from my heart to yours.
From this window, like the moon
I keep sending news secretly."



"Yesterday I was clever, so I wanted to change the world.
Today I am wise, so I am changing myself."

 



প্রেমের কবিতা

 মহাদেব সাহা

আমাদের সেই কথোপকথন, সেই বাক্যালাপগুলি
টেপ করে রাখলে
পৃথিবীর যে-কোনো গীতি কবিতার শ্রেষ্ঠ সংকলন
হতে পারতো; হয়তো আজ তার কিছুই মনে নেই
আমার মনে সেই বাক্যালাপগুলি নিরন্তর শিশির
হয়ে ঝরে পড়ে,
মৌমাছি হয়ে গুনগুন করে স্বর্ণচাঁপা আর গোলাপ
হয়ে ঝরতে থাকে;
সেই ফুলের গন্ধে, সেই মৌমাছির গুঞ্জনে
আর কোকিলের গানে
আমি সারারাত ঘুমাতে পারি না, নিঃশ্বাস ফেলতে
পারি না,
আমাদের সেই কথোপকথন, সেই বাক্যালাপগুলি
আমার বুকের মধ্যে
দক্ষিণ আমেরিকার সমস্ত সোনার খনির চেয়েও
বড়ো স্বর্ণখনি হয়ে আছে-
আমি জানি এই বাক্যালাপগুলি গ্রন্থিত করলে
পৃথিবীর একটি শ্রেষ্ঠ প্রেমের কবিতা হতে পারতো;
সেইসব বাক্যালাপ একেকটি হীরকখণ্ড হয়ে আছে,
জলপ্রপাতের সঙ্গীত মূর্ছনা হয়ে আছে,
আকাশে বুকে অনন্ত জ্যোৎ্লারাত্রির
স্নিগ্ধতা হয়ে আছে;
এই বাক্যালাপের কোনো কোনো অংশ কোকিল
হয়ে গেয়ে ওঠে,
কেনো কোনো অংশ
ঝর্না হয়ে নেচে বেড়ায়
আমি ঘুমাতে পারি না, জেগে থাকতেও পারি না,
সেই একেকটি তুচ্ছ শব্দ আমাকে কেন যে এমন
ব্যাকুল করে তোলে, আপাদমস্তক আমকে বিহ্বল,
উদাসীন, আলুথালু করে
তোলে;
এই কথোপকথন, এই বাক্যালাপগুলি হয়তো পাখির
বুকের মধ্যে টেপ করা আছে,
নদীর কলধ্বনির মধ্যে ধরে রাখা আছে এর
চেয়ে ভালো প্রেমের কবিতা আর কী লেখা হবে!
 

My most intimate moonstruck man

He said , "I will move out "
and he went away after some days
he left me into an unknown world, friendless....


"and what if..
in his place,comes back a mad man wearing his clothes! wild eyed with poison,he comes to me and asks 'give me food,m hungry! I shall bathe with u,shall sleep in ur arms!'..


the body is familiar,but his breath is unknown,the smell is different! the way he looks at me is unusual,his body..an unknown yet familiar flesh of bear!!

Lying together,content..what if, confused - I grab him by his hairs,off my chest, I ask 'Who are you?'
Least I forget,being locked in love..with him..
that 'my man' is lost!

lurking somewhere in the cold crowded streets!
in some platform,or crouching under a vegetable stall..
my most intimate moonstruck man "....

I have lost him.......