Friday 15 March 2013

দীপাবলী ও অন্যান্য


রাস্তার মোড়ের বিল্ডিংটার তেতলার ছোট খুপরি ঘরটার সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হল জানালাটা । এখান দিয়ে এক চিলতে আকাশ দেখা যায় গাছের পাতার ফাঁক দিয়ে । আর বিকেলবেলায় অসংখ্য টুটু পাখি এসে ভিড় করে গাছটায় ।ওদের চেঁচামেচিতে মাঝে মাঝে নিস্তব্ধতা ভঙ্গ হয় বলে বিরক্তও লাগে । রাতে ওই এক চিলতে আকাশে অরুণিমা খুঁজে নিতে  চেষ্টা করে  অরিয়ন এর বেল্টের ওই তিনটে তারাকে, যারা সবসময় একসঙ্গে থাকে । আর মাথার খুপরিতে অহর্নিশ ঘুরতে থাকা একটি মুখ, একটি অনুভূতিকে ভুলে যেতে চেষ্টা করে একই সাথে । কিন্তু তার সমস্ত চেষ্টা কে ব্যর্থ করে দিয়ে কেউ একজন বলে ওঠে, কিছু শুন্যতা কখনো পূরণ হয়না । কিছু অনুভূতি কখনো ভোলা যায়না ।

মাথার কাছে পড়ে থাকে জীবনানন্দ, সমরেশ, পূর্ণেন্দু পত্রী আর সদ্য পড়া একটি সুইসাইড নোট্ । কথোপকথন এর পাতা উল্টে চোখে পড়ল সোনালী কলমে লেখা একটি তারিখ । দিনটিকে মনে করবার চেষ্টা করতেই আবার ফিরে আসে সেই মুখ । তখন তার মনে হল নিজের, একান্ত নিজের বলে কিছুই কি ছিলনা তার  ! সব দিক থেকে যেন আষ্টেপৃষ্টে বাঁধা পড়ে আছে।

ফোন তুলে নিয়ে ভাবলো তার একজন আপন মানুষ যে কিনা নিতান্ত তার একার  তার সাথে কথা বলে । কল লগ ঘেঁটে খুঁজে বের করলো  শুচির নম্বর । কল বাটন চেপে ভাবতে থাকে এই মেয়েকে  ফোন করে কখনো পাওয়া যায়না । হঠাৎ স্ক্রিনে চোখ দিয়ে এক ঝটকায় কল কেটে দেয় সে । এটা তো শুচির নম্বর নয় !!ঘড়ি দেখে । রাত প্রায় দুটো । একটু আতঙ্কিত হল সে ।
-'ঘুম ভাঙিয়ে দিলামনা তো !"
 একবার ভাবলো  এসএমএস করে জানিয়ে রাখে  অনিচ্ছাকৃত ভুলের কথা ।পরে মনে হলো থাক তা  হয়ত আরেকটা বিরক্তির কারণ হবে মানুষটার।

এটা ওটা ভেবে ভেবে কখন ঘুমিয়ে পড়েছে  মনে নেই ওর ।সকালে বালিশের তলায় রাখা ফোনের ভাইব্রেশন এ ঘুম ভেঙ্গে কিছু না দেখেই ফোন রিসিভ করতেই ওপাশে চেনা কন্ঠ ।

রাতে ফোন করেছিলে ?
- না আমি শুচি কে ফোন করতে যেয়ে ভুল করে ...
ও আচ্ছা, আমি ভাবলাম কোনো দরকার ছিল বোধহয়, রাখি তাহলে
- আচ্ছা

প্রচন্ড কষ্টে, অপরাধবোধে  কুঁকড়ে যেতে যেতে  ওর মনে হল সমস্ত ঘরে নিঃশ্বাস নেবার মত এতটুকু বাতাস নেই । মাথার পাশে রাখা সাতকাহন টেনে নিয়ে উল্টাতে থাকলো।  দীপাবলীর মত শক্ত হতে চেয়েছিল সে  কিন্তু দীপাবলীর জীবন তো সে  চায়নি ।

চোখ বন্ধ করে সে দেখতে পায় রুক্ষ চুলের একটি মেয়ে, ময়ুরকন্ঠী নীল শাড়ি পরে দাঁড়িয়ে আছে খুব শান্ত একটি নদীর পাড় ঘেঁষে । নদীর শান্ত জলে ছায়া পড়েছে পাশের পাকুড় গাছটার । ঝাপসা চোখে মেয়েটি কারো একজনের চলে যাওয়া দেখে । চলে যাওয়া মানুষটার মুখে যেন একচিলতে বিদ্রুপের হাসি ।

হঠাৎ তার ময়ুরকন্ঠী শাড়ির নীল রঙগুলো খুলে পড়তে থাকে ...রঙগুলো গ্রাস করে মেয়েটির চোখ, মুখ, মন ..হয়ে যায় তার কপালের সূর্যের মত বড় টিপ ..