Monday 9 December 2013

মেয়ে -১

শোনো আমার অমল মেয়ে
জীবনের উৎসবের রঙ মাখ গায়ে,
পাখায়, ঠোঁটে, চিবুকে
রঙিন প্রজাপতি হও, উড়ে বেড়াও

আর মনে মনে মাকে ছুঁয়ে যাও 

আমার ভালবাসারা

আমার ভালবাসারা এখনও নির্ঘুম রাত্রি কাটায়
কুয়াশার সাথে ঝিরঝির শব্দে ঝরে যায় অবিরাম
একলা দাঁড়িয়ে থাকা ঝাউগাছের গা বেয়ে গড়িয়ে পড়ে টুপটাপ
আমার ভালবাসারা এখনও তোমাকে খোঁজে
জুঁই এর গন্ধের সাথে, হেমন্তের হিমে ভেজা ঘাসের সাথে
খরবর্ষণে ভিজে যাওয়া ডাহুক এর সুতীক্ষ্ণ চিৎকার এর সাথে মিলেমিশে  
শিরশিরে অন্ধকারকে বিদীর্ণ করে
পেলিকান এর শুভ্র ডানায় ভর করে, আমার ভালবাসারা
পাড়ি দেয় শত সহস্র মাইল;
পতপত শব্দে উড়ে যায়--- তোমার ঠিকানার দিকে

তুমি খুলে রেখ তোমার অলীক চেতনার জানালা 
দীর্ঘ যাত্রা শেষেও অক্লান্ত, আমার ভালবাসারা   
তোমার ঘোলা হয়ে যাওয়া চশমার কাঁচ বেয়ে
বৃষ্টির ফোঁটার মত নেমে আসবে
তারপর, তোমার চিবুক ছুঁয়ে
শস্যদানার মত ছড়িয়ে পড়বে তোমার সমস্ত শরীর জুড়ে
সেলিস্ট এর উন্মাদনা নিয়ে সুর তুলবে
তোমার নির্ঘুম রাত্রির ক্লান্তি কাটিয়ে, তোমাকে এক অলৌকিক ঘুমের দেশে পাঠিয়ে

তবেই বিশ্রাম নেবে আমার ভালবাসারা ...

দুরত্ব

তেমন কিছুইতো নয়
চেনা রেস্তোরাঁ, একটা ছোট টেবিল আর মুখোমুখি দুজন
চারিপাশে কথার কোলাহল,  অথচ কিছুই প্রবেশ করেনা করোটিতে   
মাঝে মাঝে ওই দুরত্বটুকু কি মধুরভাবে দুর্বিষহ হয়ে ওঠে
নির্মম উপহাস যেন
চাইলেই ছুঁয়ে দেওয়া যায় আবার যায়না
চায়ের কাপটা হাতে দিয়ে বলা যায় ‘এই নাও তোমার চা’
অথচ কাপটা এগিয়ে দিতে হাত ওঠেনা
পরিপাটি চুলগুলো দুরন্ত আঙ্গুল এর ছোঁয়ায় এলোমেলো করে দেওয়া যায় নিমেষে
চোখ থেকে খুলে নেওয়া যায় চশমা
বলা যায় ‘অনেক হয়েছে এবার চোখ বন্ধ’
অথচ কিছুই করা হয়ে ওঠেনা
পৃথিবীর সমস্ত অভিমান তখন বাসা বাঁধে পাঁজরে
কুরে কুরে খায় হৃদয়ের স্পন্দন
চেনা রেস্তোরাঁর
ওই এক টেবিল দুরত্বের মাঝে খেলে যায় নিশ্ছিদ্র নীল নীরবতা
শুধু আড়চোখে দেখে নেওয়া কতটুকু বদলেছে সে  
চোখ অচেনা, চুল অচেনা
আর চিরচেনা হাসিটুকু, তাও যেন অচেনা   
আজকাল নিজেই চিনিনা আর নিজের প্রতিবিম্ব 

সেতো বহুদুরের মানুষ, বহুদুরের মানুষ ...

শূন্যতা -১

আমার ভেতর বাড়ীর একমহলা উঠোন জুড়ে
এখন কেবলই শূন্যতার রাসউৎসব
নিকনো প্রাঙ্গনে রঙবাহারি অভিমানের পসরা নিয়ে
বসে আছি একলা বাউল 
ক্রেতা নেই তার
হাহাকারের মাদল ধ্বনিতে হৃদয়ের তাণ্ডব নৃত্য চলে সেখানে
রাতভর, কোজাগরী চাঁদ ভাসে চোখের বেনোজলে

সে জলে পুণ্যতার স্নান সারে প্রাচীন হৃদয়  

আক্রোশ

মাঝে মাঝে মনে হয়
দুম করে পাল্টে দিই পৃথিবীর খোলনলচে
অনেকটা শেষ বলে ছক্কা পেটানোর মত
শার্সির এর কাঁচ এর মত ঝনঝন শব্দে ভেঙে যাই
সেই কাঁচে পা রেখে রক্তাক্ত হোক, শুধু রক্তাক্ত হোক কবিতাহীন হৃদয় 
টেনে ছিঁড়ে ফেলি শৈল্পিক মুখোশ,
ঠোঁট থেকে উপড়ে নিই মনোরম মেকি হাসি
শরীরে বুনে দিই ফণীমনসার বীজ
দুঃস্বপ্নময় করে দিই তার রাত্রিদিন
লুকিয়ে রাখি তার চোখের ঘুম প্রাণভোমরার মত
আমারই গহীনে
সে বুঝুক, নির্ঘুমতার যন্ত্রণা কি ভীষণ!!
ফ্রিজশটে স্তব্ধ করে দিই তার চলে যাওয়া

আমার দিকে ফিরে হেসে, তার শেষ চলে যাওয়া । 

জেগে ওঠো অমল মেয়ে

ক্ষোভের আগুনে আর কত পুড়বে তুমি মেয়ে ? 
নিজেকে নিজে আর কত ধ্বংস করবে তুমি ?
অতটা পুড়োনা আর
তোমার জীবনটা তো শুধু তোমারই 
বাঁচ, ভীষনভাবে বাঁচ
'না' বলো সমস্ত প্রতিকূলতাকে
'না' বলো সমস্ত ভয়কে 
'না' বলো মনের দাসত্ব কে 
'না' বলো সমস্ত ধ্বংস কে
সৃষ্টি করো, শুধু সৃষ্টি করো নিজের জীবন 
ভরিয়ে তোলো আনন্দে
ঘৃণার আগুনে পুড়িয়ে ছাই করে দাও সমস্ত অকল্যাণ
বিদ্রোহ করো, ছিনিয়ে নাও তোমার স্বাধীনতা
বাঁচ মেয়ে, বাঁচতে শেখ
জেগে ওঠো আমার মেয়েটা
সকালের স্নিগ্ধ অরুণ হয়ে, অমল আলো হয়ে
যে আলো তোমার ঘুমন্ত গালে পড়ে স্বর্গীয় আভা তৈরী করে
জেগে ওঠো, দেখো
এ পৃথিবী তোমার হাসিমাখা অধরে লুটিয়ে পড়ার অপেক্ষায় রয়েছে........