Tuesday 17 September 2013

ভেজা এই শহরটা

ভিজছে বিদ্যুতের পোল, সাইনবোর্ড, ল্যাম্পপোস্ট
ভিজছে নিমগ্ন কারপার্কিং
ভিজে যাচ্ছে বারান্দায় ঝুলে থাকা নিঃসঙ্গ তোয়ালে
ভিজতে ভিজতে দর হেঁকে চলে নিলামি
পারলে ভেজা এই শহরটাকে বিকিয়ে দেয় জলের দরে
বর্ষাতি আর ছাতির আড়ালে নিজেকে বাঁচিয়ে চলে যান্ত্রিক মানুষ
কেউ কেউ আড়চোখে একবার দেখে নেয় সবজি দোকানীর হাঁকাহাঁকি
ভিজে হাওয়ায় ভিজে ভিজে সুর ছড়াচ্ছে উইন্ডচাইমস
ভিজে যাচ্ছে এই শহর
ভিজে যাচ্ছে যান্ত্রিকতা
হায়েডিজ এর শোকের অশ্রুতে,
ধুয়ে যাচ্ছে, ভেসে যাচ্ছে, ভিজে ভিজে কুঁকড়ে যাচ্ছে এই একাকী বিষণ্ণ শহর ...

মস্তিষ্কের ঘেরাটোপে বাংলা মোটর


কাঠমল্লিকায় ছাওয়া বাঁধানো উঠোন
গতরাতের বৃষ্টিতে জলজমা কোণটা হরিণীর চঞ্চলতায় পেরিয়ে,এক লাফে লাল ইটের সিঁড়িতে পা
সমুদ্র সবুজ শাড়ীর আঁচলটা একটু ঠিক করে নিতে নিতে, হঠাৎ পিছু ফিরে অফিসঘরটা একটু দেখে নিয়েই একছুটে চিলেকোঠার ঘরের সামনে
কাঠের দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ
কেউ আছেন ?
-ও আপনি !
অন্য কাউকে আশা করছিলেন ?
-না মানে ঠিক তা নয়  
তাহলে ?
-বসুন  
পড়ছিলেন ?
-এই আরকিআচ্ছা আপনি রেলের ফেরীর গল্প শুনেছেন?
রেলের ফেরী !!
রেল বুঝি ফেরী করে নদী পাড়ি দেয় !!
-কি ভীষণ বোকা আপনি  
-হাসছেন যে ?
আচ্ছা আর হাসবোনাবলুন আপনার রেলের ফেরীর গল্প 

-চা খাবেন ?
আপনি বানাবেন ?
-কেন ? পারিনা ভেবেছেন ?  
কই আপনার গল্প বলুন !

-একসময় গোয়ালন্দ ঘাট থেকে ছাড়ত  রেলের ফেরী গোয়ালন্দে এসে থামা রেলের যাত্রীরা, রেল থেকে নেমে ফেরী করে নদী পার হয়ে,ওপারে অপেক্ষা করতে থাকা রেলে চড়ে আবার রওনা দিত যে যার গন্তব্যে
-তারপর ?
তারপর ধরুন সেই রেলের কোন যাত্রীর হয়ত নির্দিষ্ট কোন গন্তব্য নেই
-তো আপনার সেই যাত্রীটি কি কোন নারী ?
সেটা বলবনা । ভেবে নিন আপনার যা ইচ্ছে হয় আচ্ছা আপনি ঘুরতে ভালবাসেন ? গন্তব্যহীন, উদ্দেশ্যহীন...
-প্রচণ্ড  
আমার সঙ্গে যাবেন ? পাহাড়ে, জঙ্গলে, সমুদ্রে ...

-আচ্ছা ধরুন সত্যি এমন যদি হত ! রেলের কামরায় মুখোমুখি বসা যাত্রীরা পড়ন্ত বিকেলের অদ্ভুত ম্লান আলোয় ফেরী করে পাড়ি  দিচ্ছে পদ্মা । কেমন হত ?
মন্দ না, সূর্যটা ঠিক লাল রুবির মত আলো ফেলবে রমণীর নরম গালে । আর তাকে দেখলে মনে হবে যেন দেবী ভেনাস সদ্য স্নান করে উঠে এসেছেন মর্ত্যে গোলাপের মতই প্রস্ফুটিত তার ওষ্ঠ । দীর্ঘ কেশরাজি থেকে বিন্দু বিন্দু গড়িয়ে পড়বে জল ।     
-তাহলে স্বীকার করলেন আপনার সেই যাত্রীটি একজন নারী
না আগে ভাবিনি । আপনি পড়ন্ত বিকেলের অদ্ভুত আলোর কথা বললেন তখন মনে পড়ল ভেনিস নগরীর কথা, দেবী ভেনাস এর কথা । আপনি সমুদ্র পাড়ি দেবেন আমার সাথে ?

ঘুলঘুলির নকশার ভিতর দিয়ে আলো এসে, অদ্ভুত এক লুকোচুরি খেলে চলে বিছানায় শেষ বিকেলের নরম আলো । কাঁঠালবাগানের ভিতরের দিকের লোহালক্কড়ের দোকান থেকে ভেসে আসে একটানা হাতুড়ি পেটার শব্দ । ঢাকার বৃষ্টিধোয়া বাতাসে কাঠমল্লিকার গন্ধ মিলেমিশে এক হয় সমুদ্র সবুজ শাড়ি, নীল টিপ এর সাথে ।

এদিকে চিলেকোঠার ঘরে কেরোসিন এর স্টোভ এ চায়ের পানি ইতোমধ্যেই শুকিয়ে গেছে ...


Wednesday 11 September 2013

তুমি নেই তাই

তুমি ছিলে তাই
তোমার হাত ধরে হাঁটতে হাঁটতে বৃষ্টিতে ভিজিনি কখনো
তুমি ছিলে তাই
বসন্ত উৎসবে মাতিনি আমি কোনদিন
তুমি ছিলে তাই
টিএসসি মোড়ের আড্ডাগুলোকে নির্দ্বিধায় পায়ে ঠেলে দিতে পারতাম
তুমি ছিলে তাই
আমি প্রচণ্ড শীতকাতুরে ছিলাম
তুমি ছিলে তাই
চপিন, রাচমানিনফ আমার কাছে অপ্রয়োজনীয় ছিল
তুমি ছিলে তাই
তোমাকে হারানোর যন্ত্রণায় আমি সপ্নের ভিতরে ভীষণ কেঁদে উঠতাম
তুমি ছিলে তাই
তুমি নিরাপদে কোথাও না পৌঁছানো পর্যন্ত আমি বিনিদ্র থাকতাম
উৎকর্ণ অপেক্ষা, শুধু অপেক্ষা মুঠোফোনে কখন আসবে বার্তা
তুমি ছিলে তাই
আমার মৃত্যুর ভয় ছিল
ছুটে আসা ট্রেনকে আমি ভীষণ ভয় পেতাম
অন্ধকারে পা ফেলতে ভয় পেতাম
কোথায় কি থাকে না থাকে সাপখোপ, মাকড়সা এই লাল মাটির দেশে
তুমি ছিলে তাই
আমার যত রাগ গিয়ে পড়ত তোমার উপর

এখন তুমি নেই,
তাই আমি প্লাটফর্ম এর ধার ঘেঁষে হাঁটতে হাঁটতে, ট্রেনের আসা-যাওয়া দেখি
তুমি নেই তাই
পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ নকটার্ন ও আমাকে পাঠাতে পারেনা ঘুমের দেশে
যদিও এখন তুমি নেই
তবুও তোমার জন্য আমার দুশ্চিন্তা হয়,
সকালের মৃদুমন্দ বাতাসের হাতে
আমি আনন্দ ভৈরবী সুরে মঙ্গলআকাঙ্ক্ষা পাঠিয়ে দিই প্রতিদিন
যদিও তুমি নেই, যদিও তুমি আর কখনো ফিরবেনা
তবুও আমি সপ্নের ভিতরে তোমাকে পাওয়ার আনন্দে হেসে উঠি .......

Monday 9 September 2013

নক্ষত্রের সিম্ফনি

প্রতিমুহূর্তে তোমার সাথে আমার কথোপকথন জন্ম দেয়
এক একটি অলিখিত মহাকাব্যের,
সে মহাকাব্যের পাতায় পাতায় অসাধারণ নির্মাণশৈলীর উদাহরণ
ঠিক কোন এক প্রাচীন সভ্যতার মতই
জন্ম দেয় এক একটি সুখের সিম্ফনির
সে সিম্ফনি তোমার রক্তে জাগায় অনুরণন
আকাশের কোন এক দূরতম নক্ষত্রের দিকে তাকিয়ে
সে সিম্ফনির ভেলায় ভাসতে ভাসতে
তুমি চলে যাও অজানায় অসীমে অতীতে
যে সুবর্ণ অতীত ধারন করে অমৃতসুধা কোন
কিংবা কারো হৃদয় ছাপাঙ্কিত মোহর
তুমি বলে ওঠ
‘নক্ষত্রজাতক আমি
আমিও নক্ষত্র হব
সুপারনোভা হয়ে ধ্বংস হব
তুমি সেঁকে নিও হৃদয় তাতে
আর সে হৃদয়ে আমৃত্যু ধারন করো আমাকে’
সভ্যতার পর সভ্যতা মরে যায়, ক্ষয়ে যাওয়া ইটের পাঁজায়
রেখে যায় অসমাপ্ত ‘রেক্যুইম’ এক
নক্ষত্রও মরে যায়, রেখে যায় প্রাচীন হৃদয় কোন
যে হৃদয়ে অনন্তকাল ধরে বাজে সুখের সিম্ফনি....

Saturday 7 September 2013

অস্তিত্বে জলের শব্দ

মরচে ধরা ভারী থামগুলোকে ঘিরে পাক খায় ঘন পীতসবুজ স্রোত । একটানা জলের ছলাৎ ছলাৎ শব্দ ।

থামগুলোর গায়ে নিবিড় সংসার পেতেছে অসংখ্য বর্ষীয়ান শামুকখোল । একটা নোঙর জংধরা শরীর নিয়ে পড়ে আছে এককোণে । পাশে বহু ব্যবহারে জীর্ণ পাটের মোটা মোটা দড়ি । দিগন্তের উদ্দেশ্যে পাড়ি দেবে বলে জেটিতে অপেক্ষা করছে একটা প্রমোদতরী । আরও দূরে বৃদ্ধ প্রহরীর মত ঝিমোচ্ছে একটা বাতিঘর । মাঝে মাঝে গভীর থেকে উঠে আসা কান্নার মত, উঠে আসছে লোনা ভিজে হাওয়া । জাহাজের ডেকে বসে থাকা, তরুণীর রোদে পোড়া তামাটে শরীর আর রোদচশমা ভেদ করে যায় সে হাওয়া । তার সোনালী চুল উড়ছে উদ্দাম । আরও অনেক দূরে দিগন্তের সীমানায় যেন থমকে আছে একটা জাহাজ, আরেকটু হলেই টুপ করে পড়ে যাবে নীচে ।  

কাঠের পাটাতনের ক্যাঁচক্যাঁচ শব্দ আর প্রমোদতরীর বাসিন্দাদের ছলছলে হাসি মিলেমিশে একাকার হয় জলের শব্দের সাথে, তারপর মিলিয়ে যায় রুপো চকচকে  ঢেউয়ের ভাঁজে ভাঁজে । মাঝে মাঝে একটা স্যাঁতসেঁতে আঁশটেগন্ধ এসে লাগে নাকে । মানুষের যাওয়া আসা চলতে থাকে অবিরাম ।

একসময় রাত নামে, তবে এ শহরে কখনই নামেনা ঝুপঝুপে গাড় অন্ধকার, আসেনা ‘নিশিরাইত’ ওড়েনা বিস্তর জোনাকি । ভাল করে অন্ধকার নামার আগেই এখানে জ্বলে ওঠে আলো । এখানে সন্ধ্যা নামে জ্যাজ মিউজিক আর গ্যাসবাতির কৃত্রিম উষ্ণতায় । ওয়েটার এর হাতে ওয়াইন গ্লাসের টুংটাং শব্দে । সান্ধ্যপোশাক আর নামী ব্র্যান্ডের পারফিউম এ । ক্যান্ডেল লাইট ডিনার এ ।

রাত বাড়ছে । বিকট শব্দে সাইরেন বাজিয়ে ছেড়ে গেল শেষ ফেরী । জেটিটা ক্রমশ ফাঁকা হয়ে আসছে । নোঙর, দড়ি, পাটাতন গোছাতে ব্যাস্ত ফেরীকর্মী । ওর মধ্যেও ঘরে ফেরার তাড়া । সরকারী জেটির পাশে আরেকটা ভাসমান প্রাইভেট জেটি। অনেকগুলো ওয়াটার ট্যাক্সি বাঁধা তাতে । পরিকল্পিত মায়াবী আলোয় অদ্ভুত লাগে দেখতে । ঢেউয়ের তোড়ে ওয়াটার ট্যাক্সি আর জেটি সমান তালে দুলতে থাকে ।

জেটির কোণে ছায়ামূর্তির মত দাঁড়িয়ে একজন ।
মোহগ্রস্তের মত শুনছে একটানা জলের শব্দ ।
হাওয়ায় উড়ছে তার নীল আঁচল । যার ঘরে ফিরে যাবার কোন তাড়া নেই ।

একবিংশ শতকের প্রেমিকেরা

এই যে একবিংশ শতকের প্রেমিকেরা,শুনুন
‘দোতলার ল্যান্ডিং’ এ, বাসস্ট্যান্ডে, ফেরীতে, বহুতল ভবনের লিফটে
হয়তো ইউরো ট্রিপে ‘রেলগাড়ির কামরায়’
কিংবা গ্র্যান্ড ক্যানেলে গণ্ডোলায় ভাসতে ভাসতে,
বহুবার আপনাদের দেখা হবে
কিন্তু আপনারা ভুলেও স্মৃতিচারণের দিকে যাবেননা;
বরং সযতনে এড়িয়ে যাবেন একে অন্যকে
এমন ভাব করবেন, যেন চিনতেন না কেউ কাউকে কোনদিন
ডিনার পার্টিতে, ব্যুফেতে খাবার নিতে নিতে
বন্ধুর সাথে মেতে উঠবেন স্থুল আলোচনায়
আর মনে মনে নাক সিঁটকোবেন তার ড্রেস সেন্সের কথা ভেবে
‘ডালিম ফুলের মত রাঙ্গা বা কালো রেশম শাড়ি’ সবই অচল এ যুগে
আপনি বরং প্রশংসায় মাতবেন
প্রাডা কিংবা লুই ভুটন এর নতুন সামার কালেকশন এর
রবীন্দ্রনাথ কে বড্ড সেকেলে ঠাউরে বলবেন
‘রাতের সব তারাই থাকে দিনের আলোর গভীরে’ এ তো স্বতঃসিদ্ধ ...
এ বাক্যের নান্দনিকতা ভুলে গিয়ে আপনি বরং হিসেব কষতে থাকবেন
অবজার্ভেবল ইউনিভার্সের সবচেয়ে দূরতম নক্ষত্রটি ঠিক কত আলোকবর্ষ দূরে
কিংবা ঠিক কোন নেবুলায় জন্ম নেয় অরিয়ন বেল্টের তারারা
অপেক্ষায় প্রহর গুনবেন
কবে বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করবেন কবিতা উপন্যাস লেখার ফর্মুলা
যা দিয়ে কিনা মাউস এর এক ক্লিকে লেখা হয়ে যাবে ‘খোয়াবনামা’
কিংবা পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ একটি প্রেমের কবিতা ।
এই যে শুনুন, একবিংশ শতাব্দীর ‘সলিচ্যুড’ আক্রান্ত প্রেমিকেরা
দিনশেষে যখন সলিচ্যুড কিংবা নীহারিকা, কালপুরুষ আর সপ্তর্ষিমণ্ডল এর মাঝে নির্বাণ খুঁজে ফিরবেন
অথবা টেক্সট করে নতুন কাউকে জানাবেন ভাললাগার অনুভূতি
জেনে রাখুন, হে একবিংশ শতকের স্মার্ট প্রেমিকেরা
তখন আপনি কবিতাই খুঁজে ফিরবেন
সে জীবনানন্দ, গুণ বা জয় গোস্বামীর ভাষায় হোক
বা থোরিউ, ফ্রস্ট, বুকওস্কির ভাষায় ।

বাজিয়ে

আমি তোমাকে নিয়ে একটা কবিতা লিখতে চেয়েছিলাম
মোটা কালো ফ্রেমের চশমার ভিতরে একজোড়া চোখ
জড়িয়ে আসছে ঘুমে, তবুও জোর করে টেনে ধরে রাখে ক্লান্ত ভারী পাতা
কি যেন খুঁজে ফেরে দিনরাত-- জীবনের মানে? হয়তো হবে
আমি তাকে নিয়ে একটা কবিতা লিখতে চেয়েছিলাম
সেই চীনে প্রবীণ
যে সেন্ট্রাল স্টেশন এর টানেল এ বসে ক্লান্তিহীন বাজায় এরহু
যার হাতের মায়ায়
এরহু’র প্রতিটি তার চুইয়ে নেমে আসে সুর
ছেয়ে ফেলে সমগ্র টানেল
সে সুর আমার ঘুমহীন রাতের ক্লান্তি এক লহমায় শুষে নেয়
বিরক্তিকর একাকী সকালগুলোকে স্নিগ্ধ করে তোলে ক্ষণকালের জন্য
আমি সেই বাজিয়ে কে নিয়ে একটা কবিতা লিখতে চেয়েছিলাম
টানেল দিয়ে হেঁটে যাওয়া সারি সারি মানুষের মাথার খুপরিতে বাড়ি খেয়ে
প্রতিধ্বনি হয়ে ফিরে আসে সে সুর
তখন সামনে রাখা পাত্রে কেউ কেউ অবজ্ঞাভরে ফেলে যায় পয়সা
জীবনযুদ্ধে ক্লান্তিহীন লড়ে চলা, ওই কুতকুতে চোখের চীনে বুড়ো
টানেল এর ভিতর দিয়ে প্রতিদিন দেখে অসংখ্য জীবন
তাদের সপ্নালু চোখের দিকে তাকিয়ে সে বাজিয়ে চলে অবিরাম
আমি তাকে নিয়ে একটা কবিতা লিখতে চেয়েছিলাম
প্রতিটা নিস্তব্ধ সন্ধ্যা আর রাত্রিতে
আমার বুকের ভিতরে ঝরে পড়ে যে অজস্র নীলচে বেগুনী জাকারাণ্ডা
ঝরে ঝরে নীলচে করে তোলে বুকের প্যারাপেট
আমি তাদের নিয়ে একটা কবিতা লিখতে চেয়েছিলাম
আমি সবসময় তোমাকে, শুধু তোমাকে নিয়ে একটা কবিতা লিখতে চেয়েছিলাম ।

মাঝে মাঝে খুব ভাল লাগে

মাঝে মাঝে ঠিক এইরকম শুনশান একটা দুপুর
খুব ভাল লাগে
ঠিক এইরকম, ঝিরঝিরে হাওয়ায় শব্দ তুলে জেগে ওঠে ইউক্যালিপটাস এর পাতা
কেয়াবনের নীচে একটু ঝুপঝুপে তরল ছায়া পড়ে
একজন বৃদ্ধ এলোমেলো উদাস ভঙ্গীতে হেঁটে চলেন বাগানে
ঠিক এইরকম একটা দুপুর মাঝে মাঝে খুব ভাল লাগে
বোগেনভিলিয়ার ঝাড়ের ভিতর থেকে ভেসে আসে মৌমাছির গুনগুন
ঠিক এইরকম একটা গুনগুন করা দুপুর খুব ভাল লাগে মাঝে মাঝে
প্রজাপতি আর ফড়িং এর বিস্তর ওড়াওড়ি দেখতে দেখতে
ঝরা পাতা নিয়ে বাতাসের খেলা দেখতে দেখতে
আমার তখন; প্রচণ্ড গ্রীষ্মের দুপুরে ঝরে পড়া সজনে ফুলের কথা মনে পড়ে
থানকুনি পাতা দিয়ে শিং মাছের ঝোল আর ধোঁয়া ওঠা গরম ভাতের কথা মনে পড়ে
মায়ের কথা মনে পড়ে ....
মনটা কেমন যেন করে ওঠে
ঠিক তখনি তীক্ষ্ণ চিৎকারে নিজের অস্তিত্ব জানান দেয় একটা দোয়েল
এই রকম একটা মন কেমন করা দুপুর, মাঝে মাঝে আমার খুব ভাল লাগে ।