Friday 30 August 2013

স্ত্রীর কাছে রাজবন্দীর চিঠি



প্রিয়তমা হে,
তোমার শেষ চিঠিতে তুমি লিখেছ
“ওরা তোমাকে ফাঁসীকাষ্ঠে ঝোলাবে, একথা শোনার পর
সহস্র হাতুড়ি যেন দুড়মুশ পিটছে আমার মগজে
আমার জগৎ গেছে থমকে
আমি পারবনা তোমার মৃত্যু দেখতে, পারবনা তোমাকে হারাতে
আমি বাঁচবনা”

হৃদয়নন্দিনী আমার,
তুমি কি জান? তুমি বেঁচে থাকবে
আমার স্মৃতি কালো ধোঁয়ার মতই মিলিয়ে যাবে বসন্তের বাতাসে
অবশ্যই বেঁচে থাকবে তুমি,
প্রিয়তমা আমার,  
এই বিংশ শতকে শোক আর কতদিন থাকে বল
বড়জোর বছরখানেক ... এর বেশি নয়

মৃত্যু... একটা নিঃসাড় ঠাণ্ডা দেহ ঝুলছে দড়িতে;  
ভাবতেই মনে হয়
আমার হৃদয় কখনো মেনে নেবেনা এমন মৃত্যু
তবে আমি বাজি রেখে বলতে পারি
লিকলিকে লোমশ কালো হাতে, যে হতভাগা আমার গলায় পরাবে ফাঁসীর দড়ি
আমার শান্ত নীল চোখের দিকে তাকিয়ে,
প্রচণ্ড ভয়ে শুধুই নিস্তার পেতে চাইবে 

প্রিয়তমা আমার,
আমার জীবনের শেষ সকালের ম্লান আলোয় তোমার সাথে আমার দেখা হবে
আমি বিদায় নেব
শুধু একটাই খেদ থেকে যাবে মনে,  
যে বিপ্লবের গান আমি শুরু করেছিলাম
তা হয়ত অসমাপ্তই থেকে যাবে ...  

আমার স্বর্ণময়ী প্রিয়তমা,
যার সুগভীর চোখের মায়ায় হারিয়ে যায় সহস্র হৃদয়...
কোন কুক্ষণে যে আমি তোমাকে লিখতে গেলাম আমার ফাঁসীর কথা
চিন্তা করোনা তুমি,
বিচার তো শুরু হল সবে
আর এতো কোন মগের মুলুক নয়
যে চাইলেই মুড়ি মুড়কির মত যাকে তাকে ঝুলিয়ে দেবে ফাঁসীকাষ্ঠে
এখন এসব কথা থাক,
হাতে যদি টাকাপয়সা থাকে
কিছু শীতের কাপড় কিনে পাঠিও
পিঠের ব্যথাটা ভীষণ ভোগাচ্ছে আমায়

আর ভুলে যেওনা,  
একজন রাজবন্দীর স্ত্রী তুমি
তোমার দৃষ্টি থাকবে, শুধুই সামনের দিকে
সুন্দর ভবিষ্যতের দিকে। 


(নাযিম হিকমত থেকে অনুবাদ)
 



Wednesday 28 August 2013

নিমজ্জন

যেন দীর্ঘদিন ধরে আমি একটা সপ্নে নিমজ্জিত হয়ে রয়েছি
বার বার জেগে উঠতে চেয়েও হয়েছি ব্যর্থ--
আর্তচিৎকারে কাঁপিয়ে দিয়েছি চারিপাশ,
তবুও ভাঙেনি ‘রিপভ্যান উইঙ্কেল’ এর এই ঘুম
অবশেষে পরাজিত আমি সখ্য গড়েছি সপ্নের সাথে
প্রতিদিন আমার সপ্নে সারি বেঁধে আসে-- চেনা অচেনা মুখ
আসে শৈশব,
তুমি... শিশু --- আসে মৃত্যু
আমার মগজে ঘোড়ার খুরের ক্ষিপ্রতা নিয়ে করে দাপাদাপি ...আমাকে ভীষণ রক্তাক্ত করে ...তৃষ্ণার্ত করে –
তখন আমি যন্ত্রণা পান করি ...
তোমাতে আকণ্ঠ নিমজ্জিত আমি শুধু যন্ত্রণা পান করি ........

Tuesday 27 August 2013

Tunnel of Solitude

I walk through the tunnel of solitude
With a sea of people around me
No one ever turns their face to another
They rush to reach their destination ...like a puppet
I do the same as well
They look tired .... and so am I
I feel, I didn't sleep for a long time
but I continue to walk .....to find a shore where I can fall into a deep sleep,
Deep into the darkness ....

No I don't want to dream, not anymore
not even a good one ....
Don't want to loose you, not anymore
Not even in my dream
I just want to fall into a deep sleep
Just want to fall into ....a deep deep sleep.

চাবি

মুহূর্তে সচকিত হয়ে উঠি
চেনা কারো পায়ের শব্দ, খুব চেনা...
চাবির শব্দ, দিন শেষে বাড়ি ফিরে ঘর খোলার চাবি
একটা অদ্ভুত রকম ঝনঝন শব্দে বাজে ওই চাবি
আর কেউ পারেনা ওভাবে বাজাতে ...
বহুদিন যেন কেউ খোলেনা দরজা বাইরে থেকে ...
উৎকণ্ঠ আমি অপেক্ষায় থাকি ...অপেক্ষায় থাকি
কেউ ফিরবে একসময় ... সেই একই চেনা আর ভয়ঙ্কর রকম সুন্দর করে বাজতে থাকবে তার হাতের চাবি
আমি মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে শুনবো ...শুনবো
একসময় বাতাসে মিলিয়ে যায় শব্দ ...
তবুও বাকরুদ্ধ আমি ... স্মিত হেসে বলি
আবার বাজাও তুমি তোমার হাতের চাবি
অনন্তের পানে চেয়ে আমি বসে আছি,বসে আছি
কেবলই বসে আছি ।

কথোপকথন

আমার দিকে তোমার নিবদ্ধ দৃষ্টি--
চোখে চোখ পড়তেই ফিরিয়ে নিলে,
আমার দৃষ্টির আগুনে পুড়তে ভয় পাও?
নাকি হঠাৎ দেখা হওয়াতে অপ্রস্তুত?
তোমার দৃষ্টির অসহায়ত্ব আজকাল বড্ড চোখে পড়ে, অনুপম--
জানো?ভীষণ চোখে পড়ে
নিশ্চয় ভাবনি দেখা হবে ...আমিও না
কি দেখছিলে অমন করে? কেমন আছি ?
আগের মতই আছি ...বেঁচে আছি
খাচ্ছি, ঘুমাচ্ছি, হাসছি, কথা বলছি
দিব্যি বেঁচে আছি --
তুমি কেমন আছ বল? চা কি অনেক কম খাচ্ছ আজকাল?
কম খেলেই ভাল ...
আর ঘুম? ঘুমের ভিতরে ভুতের হুটোপুটিতে ভয় পাওনা আর?
ঘুম ভালই হবার কথা, অন্তত কেউ তো আর দুঃস্বপ্ন দেখে রাত বিরাতে জাগিয়ে তোলেনা--
বিস্তর ঘোরাঘুরি কর শুনি আজকাল ... ভাল
একাকীত্ব কে ভয় পাই কিনা?
কি জানি এভাবে তো কখনও ভেবে দেখিনি
তুমি?
আচ্ছা তুমিও জানোনা ...
আজ হঠাৎ ফতুয়া পরলে যে? তাও আবার ঠিক আমার পছন্দে কেনা নীল ফতুয়া?
নীল আমার পছন্দের রঙ মনে আছে বুঝি!!
আগে আমি পরতে বললে কী যে বিরক্ত হতে ..
আচ্ছা থাক সে কথা --
ও ব্রায়ান কক্স আসছে সিডনী তে, জানো বোধহয় ...যাচ্ছ নিশ্চয়?
না আমি যেতে পারছিনা ...
ছবি আঁক না আর?
তবে আমার শখের রঙপেন্সিল গুলো নিয়ে গেলে যে –
কবিতা পড়ি কিনা?
পড়ি ... তবে হেলাল হাফিজ পড়িনা আর ...
পূর্ণেন্দু পত্রী ও না ...
কেন?
ঠিক জানিনা...স্মৃতিকাতরতা হয়ত ...তুমিই প্রথম কিনে দিয়েছিলে কিনা
আজকাল বরং রুদ্রের কবিতা পড়ছি অনেক ... সাথে তসলিমাও
ওই যে সবাই খাওয়ার জন্য ব্যাস্ত হয়ে পড়েছে ... চল যাই
আবার ফিরতে হবে ...এতটা পথ
নতুন রান্নাবান্না শিখলে কিছু?
সবসময়ই বাইরে খাচ্ছ ... আগে তো মোটেও পছন্দ করতেনা
একা যাব কিনা?
না — তবে সমস্যা হবেনা ... একাই তো চলি আজকাল
আবারো কেমন আছি? অভ্যাস টা এখনও গেলনা তোমার ...
সব প্রশ্নের উত্তর কেন চাও সরাসরি?
চল উঠি...
ভাল আছি ...অনেক ভাল আছি

ফসিল

কোন এক সমৃদ্ধ প্রাচীন নগরীর ধ্বংসাবশেষ এর মত
দাঁড়িয়ে আছি নড়বড়ে আমি,
খসে খসে পড়েছে, বুকের নীল দেয়ালের পলেস্তারা বহু আগেই
কিন্তু তুমি কখনো জানোনি...
মাটির গহীনে কোন এক বদ্ধ কুঠুরিতে এখনও রয়েছে ফসিল কোনও
বহু বহু প্রত্নতত্ত্ববিদ অনেক খুঁজেও পায়নি যার সন্ধান
কিন্তু তুমি কখনও করোনি তার খোঁজ
তবুও এই ঘুণে ধরা হাঁড় পাঁজর নিয়ে আমি ঠাঁই দাঁড়িয়ে থাকি
হয়তো, হয়তো তুমি পেরিয়ে আসছ শত সহস্র আলোকবর্ষ পথ...
কোন সুদূর নক্ষত্রমণ্ডলে তোমার বসবাস?
যে শত সহস্র আলোকবর্ষ পেরিয়ে, কৃষ্ণগহ্বর পেরিয়েও
আমার তীব্র আকুতি পৌঁছেনা তোমার কাছে
আর কতটা পথ বাকী তোমার?
প্রত্নতত্ত্ববিদের উন্মত্ত্ব কুঠার এর আঘাতে
আপাদমস্তক ভেঙ্গে পড়বার আগে তুমি পারবে কি পৌঁছতে
পাবে কি সেই ফসিলের সন্ধান ?

The Jar of Lonliness

Your loneliness is locked inside a cloche,
This reflects your inner self like a mirror
A gorgeous cloche you preserved for the purpose
Now it is scaring me with its colorless face
There you gathered each and every lonely moment, in a blurry wish
that one day you will make them free
And with them you will become free as well
At last you have become free,
Now spread your wings and fly towards eternity
Leaving your sorrows, loneliness behind..... Under the beautiful cloche
I can hear your soliloquy, you promise to yourself to forget everything
But remember, O my dear
Remember one thing
No matter how much you try
There is no way out of the mind
No way out of the mind....

চিঠি

আজ হাতে পেলাম তোমার অপ্রত্যাশিত চিঠি
না, কোন সম্বোধন করনি –
শুধোওনি কোন কুশল ...
কিন্তু তুমি একটা চিঠি লিখেছ
লিখেছ—‘পুরনো চিঠিগুলো ফেরত চাই’
কেন? যাকে লিখেছিলে সেইসব চিঠি-- রয়েছে তো তারই কাছে ...
তবে ফেরত কেন চাও ?
‘লিখেছিলাম তোমাকে বটে, কিন্তু কাগজ আমার, কালি আমার’
কাগজ, কালি বাজারে কিনতে পাবে ঢের
চাও যদি চুকিয়ে দিতে পারি দাম ...
আমাকেই যখন লেখা-- থাকুক না হয় আমার কাছেই...
থাকুক না হয় একটু স্মৃতি... গন্ধ মাখা তোমার চুলের, চায়ের কাপের --
রাত্রি জাগা সেই প্রহরের ...
আমার কাছেও যত্নে রবে, দেখতে চাইলে দেখতে এস ...
তোমার তুমি, অতীত তুমি, স্মৃতির তুমি ---
অনেক পরে, অনেক অনেক দিনের পরে
স্মৃতির সাথে মিশে যেতে
আলোকবর্ষ পেরিয়ে এস ...

Thursday 1 August 2013

প্রিয় রঙ্কু



রঙ্কু,
শুভ জন্মদিন অসংখ্যবার লিখতে ইচ্ছা হচ্ছে শুভ জন্মদিন রঙ্কু শুভ জন্মদিন
জানি আজকের বাস্তবতায় এই চিঠি তোমার পড়তে ইচ্ছা হবেনা কিন্তু আমার লিখতে ইচ্ছা হলো
বাংলাদেশে এখন বর্ষা ঘোর বর্ষা আমি তোমাকে দেওয়া জন্মদিন এর কার্ড গুলো দেখছিলাম একটা কার্ডে লেখা "বৃষ্টির দিনে জন্মেছিলে তাই কি বৃষ্টি এত ভালো লাগে ?" বৃষ্টি আমার ভালো লাগে সবসময় লাগত তবে দূর থেকে দেখতে আর শব্দ শুনতে ভিজতে সেভাবে কখনো ইচ্ছা হয়নি ঠান্ডা লাগার ভয় কিনা জানিনা বা না ভিজতে ভিজতে হয়ত অভ্যাস হয়ে গিয়েছিল নতুন কিছু করে দেখার ইচ্ছা টা হয়ত মরে গিয়েছিল ভিতর থেকে

আমি এখন বৃষ্টিতে ভিজতে শিখেছি তুমি যাবার পরে অনেক ভিজেছি কি আশ্চর্য !! ঠান্ডা কিছুতেই লাগলনা !! তোমাকে কাছে পাবার ইচ্ছাতে ঠিক তোমার মত করে  ভেবেছি আমি অসুস্থ হলে হয়ত তুমি আসবে একবার দেখতে তো আসবে  যেমন তুমি আম্মাকে কাছে পাবার জন্য জ্বর বাধাতে চাইতে ভবিষ্যতেও হয়ত অনেক ভিজবে বৃষ্টিতে অনেক ঘুরবে নতুন নতুন জায়গায় সেইসব পাহাড়ে যেসব পাহাড়ে গেলে, চারিদিক সবুজে ভরা সেই পাহাড়  দেখলে মানুষ চোখের পলক ফেলতে ভুলে  যায় একসাথে যাওয়ার কথা ছিল ভেবেছিলাম বাংলাদেশে গেলে সবাই  মিলে যাব মানুষ কত কিছু ভাবে !!

ভালো থেক ভালো থেক ভালো থেক অনেক ভালো অনেক অনেক ভালো তোমার স্বপ্নগুলো পরিপূর্ণ দেখার অপেক্ষায় আছি আবারও ভালো থেক শুভ জন্মদিন
জুলাই, ২০১৩