কাঠমল্লিকায় ছাওয়া বাঁধানো উঠোন
।
গতরাতের বৃষ্টিতে জলজমা কোণটা
হরিণীর চঞ্চলতায় পেরিয়ে,এক লাফে লাল ইটের সিঁড়িতে পা ।
সমুদ্র সবুজ শাড়ীর আঁচলটা একটু
ঠিক করে নিতে নিতে,
হঠাৎ পিছু ফিরে অফিসঘরটা একটু দেখে নিয়েই একছুটে চিলেকোঠার ঘরের সামনে
।
কাঠের দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ ।
কেউ আছেন ?
-ও আপনি !
অন্য কাউকে আশা করছিলেন ?
-না মানে ঠিক তা নয়
তাহলে ?
-বসুন
পড়ছিলেন ?
-এই আরকি … আচ্ছা
আপনি রেলের ফেরীর গল্প শুনেছেন?
রেলের ফেরী !!
রেল বুঝি ফেরী করে নদী পাড়ি দেয় !!
-কি ভীষণ বোকা আপনি
-হাসছেন যে ?
আচ্ছা আর হাসবোনা … বলুন আপনার
রেলের ফেরীর গল্প
-চা খাবেন ?
আপনি বানাবেন ?
-কেন ? পারিনা
ভেবেছেন ?
কই আপনার গল্প বলুন !
-একসময় গোয়ালন্দ ঘাট থেকে ছাড়ত রেলের ফেরী । গোয়ালন্দে এসে থামা রেলের যাত্রীরা, রেল থেকে নেমে
ফেরী করে নদী পার হয়ে,ওপারে অপেক্ষা করতে থাকা রেলে চড়ে আবার
রওনা দিত যে যার গন্তব্যে।
-তারপর ?
তারপর ধরুন সেই রেলের কোন যাত্রীর
হয়ত নির্দিষ্ট কোন গন্তব্য নেই
-তো আপনার সেই যাত্রীটি কি
কোন নারী ?
সেটা বলবনা । ভেবে নিন আপনার
যা ইচ্ছে হয় ।
আচ্ছা আপনি ঘুরতে ভালবাসেন ? গন্তব্যহীন, উদ্দেশ্যহীন...
-প্রচণ্ড ।
আমার সঙ্গে যাবেন ? পাহাড়ে,
জঙ্গলে, সমুদ্রে ...
-আচ্ছা ধরুন সত্যি এমন যদি হত
! রেলের কামরায় মুখোমুখি বসা যাত্রীরা পড়ন্ত বিকেলের অদ্ভুত ম্লান আলোয় ফেরী করে
পাড়ি দিচ্ছে পদ্মা । কেমন হত ?
মন্দ না, সূর্যটা ঠিক লাল
রুবির মত আলো ফেলবে রমণীর নরম গালে । আর তাকে দেখলে মনে হবে যেন দেবী ভেনাস সদ্য
স্নান করে উঠে এসেছেন মর্ত্যে । গোলাপের
মতই প্রস্ফুটিত তার ওষ্ঠ । দীর্ঘ কেশরাজি থেকে বিন্দু বিন্দু গড়িয়ে পড়বে জল ।
-তাহলে স্বীকার করলেন আপনার
সেই যাত্রীটি একজন নারী ।
না আগে ভাবিনি । আপনি পড়ন্ত
বিকেলের অদ্ভুত আলোর কথা বললেন তখন মনে পড়ল ভেনিস নগরীর কথা, দেবী ভেনাস এর কথা । আপনি
সমুদ্র পাড়ি দেবেন আমার সাথে ?
ঘুলঘুলির নকশার ভিতর দিয়ে আলো
এসে, অদ্ভুত এক লুকোচুরি খেলে চলে বিছানায় । শেষ বিকেলের নরম আলো । কাঁঠালবাগানের ভিতরের দিকের
লোহালক্কড়ের দোকান থেকে ভেসে আসে একটানা হাতুড়ি পেটার শব্দ । ঢাকার বৃষ্টিধোয়া
বাতাসে কাঠমল্লিকার গন্ধ মিলেমিশে এক হয় সমুদ্র সবুজ শাড়ি, নীল টিপ এর সাথে ।
এদিকে চিলেকোঠার ঘরে কেরোসিন
এর স্টোভ এ চায়ের পানি ইতোমধ্যেই শুকিয়ে গেছে ...
No comments:
Post a Comment