Friday, 11 October 2013

আশীর্বাদ

তুমি বললে “আমার সমস্ত আশীর্বাদ, সমস্ত মঙ্গলআকাঙ্ক্ষা তোমাদের জন্য
তোমরা এগিয়ে যাও”
নিজের আজন্ম লালিত সপ্নকে ডুবিয়ে দেবার কষ্টকে বুকে চেপে  
তোমার কান্নাভেজা কণ্ঠ পিছনে ফেলে,
ভালবাসার হাত ধরে ছুটে চলে গেলাম
ঝাঁ চকচকে রেস্তোরাঁর মায়াবি আলোর আয়োজনে  
জুলাই শেষের সিঙ্গাপুর, ভ্যাপসা বাতাস, চারিদিকে নয়নাভিরাম কাঠমল্লিকার ঝোপ
কিন্তু এতটুকু সুবাস ছিলনা বাবা, জানো ?
তোমার আশীর্বাদ কি ভুল ছিল বাবা ? নাকি আমি ওগুলোকে ভুলে ফেলে এসেছিলাম ?
সেংকাং এর সেই গগনচুম্বী অট্টালিকার সুইমিং পুলের ধারে
মনে পড়েনা আর …
শুধু এটুকু জানি, ওরা আমার সাথে আসেনি বাবা এই রুক্ষ লাল মাটির দেশে 

মার্চের গনগনে বাংলাদেশ, কৃষ্ণচূড়া আর পলাশের আগুন চারিদিকে
ছায়া ভরা টিনের বাড়ীটা ম ম করছে সজনে ফুল, আমের মুকুল আর লেবু ফুলের গন্ধে
সকাল থেকে আত্মীয়রা একে একে এসেছেন শেষবার দেখা করতে
কোণার ঘরে দুপুরের নামাজ শেষে জায়নামাজে বসে আছেন নানু
দুজনকে কাছে টেনে নিয়ে বললেন “আল্লাহ তোমাদের সকল ইচ্ছা পূর্ণ করুন
ফুটফুটে একটা সন্তান হোক তোমাদের, আমার দোয়া রইল”  
বিদায় নেবার সময় হয়ে এল
তখন রাত, নিয়মমাফিক লোডশেডিং এর অন্ধকার চারিদিকে
বিশাল মহুয়া গাছটার ফাঁকে, মস্ত বড় একটা চাঁদ উঠেছে
আজ পূর্ণিমা নাকি ? চাঁদটাকে আরেকবার দেখে নিয়ে
থলিভর্তি আপনার দোয়া নিয়ে আমি ফিরে এলাম নানু
চার হাজার মাইল বিমানভ্রমণের কথা মনে হতেই আমার ক্লান্তি এল
আমি ভালবাসার কাঁধে মাথা রেখে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে গেলাম
এর ফাঁকে কখন যেন আপনার সব দোয়া থলি থেকে পড়ে, বিমানের জানালা গলিয়ে
বৃষ্টি হয়ে ঝরে ঝরে গেছে বাংলাদেশের আকাশে
নানু, আমি জানতেও পাইনি

এখন অক্টোবর, সিডনীর বাতাসে  শুধুই জুঁই ফুলের গন্ধ  
এখানে যদিও শিউলি ফোটেনা, তবুও সাড়ম্বরে মা দুর্গা আসেন তার সন্তান সন্ততি নিয়ে
লাল টালির বাড়ীটার নীচতলা এই প্রচণ্ড গরমেও বেশ ঠাণ্ডা
সিঁড়ি দিয়ে নীচে নামতে নামতে বলি … ‘দিদি আমি যাই’
দোতলা থেকে ভেসে এল “আচ্ছা এস … দুর্গা দুর্গা”
নীচতলার ঘরে প্রতিধ্বনি হল “দুর্গা দুর্গা”
কিন্তু আমি জানি দিদি
ঢালাই লোহার সাদা গেট পেরিয়ে বড় রাস্তায় উঠতে না উঠতেই  
তোমার দুর্গা আমাকে ছেড়ে যাবেন
যেমনটা গ্যাছে আমার বাবার আশীর্বাদ, আমার নানুর দোয়া
তবে এবার আমি ঘুমে অচেতন থাকবনা
এবার আমি, হাসিমুখে তার চলে যাওয়া দেখব …




No comments:

Post a Comment